ঢাকা,বুধবার, ৮ মে ২০২৪

ইলিশ পরিবহনে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি

ওমর ফারুক হিরু :
কক্সবাজারে জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ। এতে ট্রলার মালিক, জেলে ও ভোক্তাদের মুখে হাঁসি ফুটলেও ভাল নেই দূর্বতী স্থানে ইলিশ নিয়ে যাওয়া মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তারা খুবই হতাশা এবং ক্ষোব্দ কিছু অসাধু হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি’র কারনে। এসব পুলিশেরা চেক-আপএর নামে চাঁদার জন্য চরমভাবে হয়রানি করছে মাছ ব্যবসায়ীদের। ইলিশ ভর্তি এক একটি গাড়ি নিদৃষ্ট স্থানে পৌছাতে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা দিতে হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর তাদের দাবীকৃত চাঁদা না দিলে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখছে মাছ ভর্তি ট্রাক। যার ফলে মাছ ফুলে গিয়ে মান কমে যাচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে বাজার দর। এছাড়া নিদৃষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌছাতে না পেরে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে হাইওয়ে পুলিশ বলছে, বিষয়টি সঠিক নয়। গাড়িতে করে কি যাচ্ছে এবং গাড়ির বৈধতা চেক করাই তাদের কাজ। সেই অনুযায়ী চেকআপ করা হচ্ছে। এর বাহিরে কিছুনা।
শহরের বিমান বন্দর সড়ক এলাকার মৎস্য অবতরণ ও পাইকারী মৎস্য বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ফিসারী ঘাটে প্রচুর ইলিশ। মাছ ব্যবসায় সংশ্লিষ্টদের ব্যস্থ সময় কাটছে বোট থেকে ইলিশ নামানো, বিক্রি, বরফ দিয়ে মজুরকরন সহ নানা কাজ নিয়ে। কিন্তু এত ইলিশ পাওয়ার পরেও দূরবর্তী স্থানে মাছ নিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের মন ভাল নেই। তাদের অভিযোগ জায়গায় জায়গায় হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির কারনে তারা অতিষ্ট। তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।
ফিসারী ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী মোঃ ফরহাদ জানান, কক্সবাজারের ইলিশ চট্টগ্রাম, ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। আর এসব ট্রাক থেকে জায়গায়-জায়গার চাঁদা আদায় করছে হাইওয়ে পুলিশ। তাদের দাবী থাকে ১ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। দাবিকৃত চাঁদা না দিলে গাড়ি রেখে দেয় ঘন্টার পর ঘন্টা। যার ফলে মাছ ফুলে যায় এবং মান কমে যায়। এতে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয় মাছ ব্যবসায়ীর।
কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম জানান, সরকারকে টেক্স দিয়ে মাছ ভর্তি ট্রাক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। আর ওসব মাছের ট্রাকে হাইওয়ে পুলিশের চেকআপের নামে চাঁদাবাজি চলছে। এই হয়রানি বন্ধ না হলে ব্যবসায়ীদের মারাত্বক ক্ষতি হবে। এটি শুধু কক্সবাজার নয় পুরো বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ জরুরী হয়ে পড়েছে।
ট্রাক চালক ওসমান মিয়া জানান, কক্সবাজার থেকে মাছ নিয়ে ঢাকা পর্যন্ত যেতে হাইওয়ে পুলিশকে ১০ হাজারেরমত চাঁদা দিতে হয়। তাদেরকে ১-২ শত টাকা দিলে মানেনা। অতিরিক্ত টাকার জন্য গাড়ির কাগজ-পত্র দেখাতে বলে। আর ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখে।
মৎস্য অবতরণ ও পাইকারী মৎসা বাজারের ব্যবস্থাপক মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, মৎস্য ব্যবসায়ীরা প্রায়ই অভিযোগ করে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির ব্যাপারে। তাদের বলা হয়েছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করলে আর তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পেশ করা হবে। যাতে করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করে।
এব্যাপারে এ্যাডভোকেট লিয়াকত মিয়া জানান, কিছু অসাধু হাইওয়ে পুলিশের কারনে যদি মৎস্য ব্যবসার ক্ষতি হয় এটি মারাত্মক অপরাধ। তারা দেশের জন্য ক্ষতিকারন। তাদের বিরুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ ফাড়ির এসআই রুহুল আমিন জানান, এই অভিযোগটি সঠিক নয়। এছাড়া এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেননা।
জেলা হাইওয়ে পুলিশের ওসি মোজাহিদুর রহমান জানান, তার জানা মতে বিষয়টি সঠিক নয়। অন্ততঃ তিনি যতদিন থাকবেন এই ধরনের কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ড হতে দেবেননা।

পাঠকের মতামত: